A review by amorasad
The Science Fiction Hall of Fame, Volume One 1929–1964: The Greatest Science Fiction Stories of All Time Chosen by the Members of the Science Fiction by Robert Silverberg

4.0

Science Fiction Hall of Fame Volume One একটা গল্পসংগ্রহ। ১৯২৯ থেকে ১৯৬৪ সালের ভেতরের সেরা সাই-ফাই গল্পসমূহ এখানে স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো বাছাই করেছেন 'অ্যামেরিকান সাইন্স ফিকশন রাইটারস' সংস্থার লেখকেরাই, ভোটাভুটির মাধ্যমে। অনেকটা ধরে নেয়া যায় সাই-ফাইয়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলা গল্পগুলোর সমারোহ এই বই। জনরাটায় কেউ আগ্রহী হলে এই বই হতে পারে প্রথম গন্তব্য। আসিমভ, ব্রাডবারি, আর্থার সি ক্লার্ক, হাইনলাইন প্রমুখসহ বড় বড় সাই-ফাই লেখকের অন্তর্ভুক্তি দেখা যাবে এতে।
গল্পগুলো ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে প্রকাশের সালের হিসেবে। ক্রম ধরে পড়তে পড়তে এগোলে একজন পাঠক কিছুটা আঁচ করতে পারবেন বাছাই করা সময়সীমার বছরগুলিতে লেখকদের লেখার বিষয়বস্তু কিভাবে পাল্টেছে সমসাময়িক বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। প্রথমদিকে মঙ্গলগ্রহ যেভাবে এসেছে, পরের গল্পগুলোতে আসেনি, বিষয়বস্তু আর কল্পনার ন্যারেটিভ পালটে গেছে। স্নায়ুযুদ্ধ, পরমাণু প্রযুক্তিভীতি গল্পে এসেছে। মহাকাশ অভিযান নিয়ে গণমানুষের অনীহা আর ভয়ও দেখতে পেয়েছি।
তবে কিছু গল্প অনেক বেশী ফিউচারিস্টিক, ওগুলোর লেখকেরা নিজেকে তাঁর চেনা গণ্ডির ভেতর রাখতে চাননি।

২৬টা গল্পের ভেতর সবগুলো আমার ভালো লাগেনি। আবার কয়েকটা খুব ভালো লেগেছে। ভালো না লাগাগুলোর কথা বলি আগে —

The Nine Billion Names of God - এই গল্পটা কার্ল সেগানের পছন্দ ছিলো। সত্যজিত রায় বাংলায় অনুবাদ করেছেন। দালাই লামার প্রশংসা করেছেন। লেখক, আর্থার সি ক্লার্ক।
মঠের সন্যাসীরা ইশ্বরের সম্ভাব্য সকল নাম তালিকাভুক্ত করতে চায়। ইশ্বরের সকল নাম তালিকাভুক্ত করা হলে মোক্ষ লাভ হবে। কাজটা হাতে করতে বহু বছর লাগবে বলে বহিরাগত একটা কম্পিউটার এবং দুজন অপারেটর নিয়ে আসেন।
গল্পটা আমার পানসে লাগছে। বিষয়বস্তুর তুলনায় বর্ণনা আর লেখার বিস্তার নেহাতই সংক্ষিপ্ত।

Nightfall - আসিমভের নাইটফলের অপছন্দ করার পেছনে কারণ উলটো। প্রয়োজনের তুলনায় বেশী বড় মনে হয়েছে, তাও ছোট গল্প হিসেবেই। শুনেছি এটা নাকি নভেলেও রূপান্তর করা হয়েছে। ওই নভেল পড়তে গেলে নির্ঘাত মারা পড়ব।
কাল্পনিক এক গ্রহে একাধিক সূর্য থাকায় কখনও রাতের দেখা পাওয়া যায় না। ফলে অধিবাসীরা এক ধরণের মারণঘাতি 'অন্ধকার ভীতি'তে ভোগে। গ্রহের বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেন এই গ্রহে প্রতি ২০০০ বছর পর সূর্যগ্রহণ হয় এবং সমস্ত গ্রহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
ব্যাস...মহাপ্রলয়ের এন্তেজাম শুরু।

ভালো না লাগলেও এই গল্পগুলোকে বাতিল করার সুযোগ নেই। আসিমভ ও সি ক্লার্ক দুজনই প্রিয় লেখক। এই বেলা দাঁত বসাতে পারিনি আরকি।

পছন্দের গল্পগুলোর কথা বলি।

Stanley G. Weinbaum - "A Martian Odyssey"
মঙ্গল অভিযানে একজন মহাকাশ অভিযাত্রিক মঙ্গলের একাধিক প্রজাতির অধিবাসীর দেখা পান, এদের একজনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাঁর সাথে মঙ্গল অভিযানে বের হন। অভিযানের বর্ণনা মুগ্ধ করে।

John W. Campbell - "Twilight"

একবিংশ শতাব্দীর একজন টাইম ট্রাভেলার সাত মিলিয়ন বছর ভবিষ্যতে পৌছে উন্নতির চরমতম রূপ দেখতে পান৷ গল্পটার গল্পের চেয়ে ভবিষ্যতের রূপের কাল্পনিক বর্ণনা বেশী আকর্ষণ করেছে৷ ফিলিপ কে ডিকের অটোফ্যাকের কথা মনে পড়ছিলো।

Theodore Sturgeon - "Microcosmic God"

অতি মেধাবী জৈবরসায়নবিদ দূর্গম দ্বীপে প্রাণের সৃষ্টি করেন। প্রকৃতিতে ঘটে চলা বিবর্তনের মত করে এক কোষ থেকে বহুকোষ এবং আরো পরে পুরোদস্তুর বুদ্ধিমান প্রাণীর উদয় হয়। বিজ্ঞানী নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এই নতুন প্রাণীদের বিভিন্ন প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে বাধ্য করে সভ্যতা গড়ে তোলেন৷ সবকিছু খুব দ্রুত এগোয়, দেখতে দেখতে প্রাণীগুলোর সংস্কৃতি, সভ্যতা ও বিজ্ঞান বাইরের মানুষের চেয়ে এগিয়ে যায়।

Fredric Brown - "Arena"

একই নামের স্টার ট্রেক সিনেমা এ গল্প থেকেই অনুপ্রাণিত৷
দুটো সভ্যতা একে অপরকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর, যুদ্ধের পর যুদ্ধ করে যাচ্ছে৷ এক পক্ষে মানুষ, অন্য পক্ষে আক্রমণকারী বহিরাগত এলিয়েন। বাঁধ সাধে তৃতীয় পক্ষ, আরো উন্নত কোন প্রজাতি। মানুষ ও বহিরাগত উভয় প্রজাতি থেকে একজনকে বাছাই করা হয় যার যার প্রজাতিকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে। দুজনের মধ্যে লড়াইয়ে যে জিতবে, তাঁর প্রজাতি টিকবে, অপরজনের প্রজাতি নিশ্চহ্ন হয়ে যাবে৷

Murray Leinster - "First Contact"

নাম যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এলিয়েন প্রজাতি সাথে প্রথম সাক্ষাতের জল্পনা৷ তবে মারামারি বা দখলদারি কোনটাই নয়। উভয় প্রজাতির স্কাউট শিপ একটা উজ্জ্বল নেবুলা রিসার্চ করতে গিয়েছিলো। পরস্পরের ভেতর যোগাযোগ স্থাপন হলো। সবচে বড় যে চ্যালেঞ্জ দেখা গেলো -- কেউই অন্যকে ফিরে যেতে দিতে রাজী না৷ অন্যপক্ষ যেন আমার গ্রহের ঠিকানা না জানতে পারে। জানলেই সর্বনাশ। পাছে ফিরে গিয়ে বলে দেয় আর পুরো গ্রহ মিলে মারমার করে ধেয়ে আসে!

এই গল্পটা চমৎকার ভাবে প্রথম যোগাযোগের ব্যাপারটা সামলেছে৷ মানবজাতিকে প্রিমিটিভ আর এলিয়েনকে উচ্চতর না বানিয়ে সমমাত্রার কিন্তু ভিন্নরকম সভ্যতা দেখিয়েছে৷ কূটনৈতিক ভাবে সমাধানে গিয়েছে, যেমনটা বুদ্ধিমান প্রাণীর ক্ষেত্রে হওয়া উচিৎ।

James Blish - "Surface Tension"

গ্রহ গ্রহান্তরে উপনিবেশ স্থাপন করে বেড়াচ্ছে মানুষ৷ এর ভেতর এক গ্রহে বেশিরভাগ প্রাণই ছোট ও পানিতে বসবাসকারী। গ্রহের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্যে পানিতে মাইক্রোস্কোপিক মানবসভ্যতা গড়ে ওঠার অনুকূল দেহ তৈরী করে দিয়ে মানুষেরা বিদেয় নেয়। নতুন মানব সভ্যতা বেড়ে ওঠে নিজেদের মত করে, যাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ পানির পৃষ্ঠটান। একে জয় করেই পূর্বপুরুষের ইতিহাস জানতে মহাকাশে পাড়ি দিতে পারবে মাইক্রোস্কোপিক মানুষেরা।

Daniel Keyes - "Progress Report"
আমার সবচেয়ে পছন্দের গল্প এটা। উত্তমপুরুষে বর্ণিত গল্পে দেখা যায় বক্তা খুবই নির্বোধ এবং হাবাগোবা মানুষ। যাকে সবাই উপহাস করে, লাথিগুতো মারে। দুজন বিজ্ঞানী বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর স্পেশাল চিকিৎসা প্রয়োগ করেন বক্তার উপর৷ বক্তার মনন ও চিন্তাচেতনায় উন্নতি আসতে শুরু করে খুব দ্রুত। বক্তা ডায়রি রাখে৷ সে ডায়রির এন্ট্রি মূলত গল্প।

প্রথমে গল্প পড়তে গেলে বানানের কারণে বেশ অসুবিধেয় পড়তে হবে৷ ভুল বানানে লেখা। কারণ বক্তা তখনও বানান পারে না। আস্তে আস্তে তাঁর উন্নতির সাথে লেখার বানান ও বাক্যগঠন উন্নততর হতে থাকে।

এই গল্পে সাইফাই অংশ নেহাতই অল্প পরিসরে। ট্রাজেডি বলা চলে। ভাবাবেগে ভাসানোর মত মানবিক গল্প৷ স্মৃতিতে গল্পটা মনে গেঁথে থাকবে বহুদিন।

-----

সাই-ফাই হ অ ফে ভলিউম ২ এ আর ২ বি আরো দুটো বই আছে৷ দুটোই পড়ার ইচ্ছে আছে।