Take a photo of a barcode or cover
sharika 's review for:
অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট
by Erich Maria Remarque
পল বোমার। তারুণ্যের প্রথম ছোঁয়া লাগা এক কিশোর। যেইসময়ে তার পার করার কথা উচ্ছল আনন্দময় এক সুখী জীবন, ঠিক সেইসময়টিতে তাকে যোগ দিতে হলো যুদ্ধের বিভীষিকায়।
"... যুদ্ধের প্রথম বোমাটা ঠিক হৃদয়ের মধ্যে পড়ে" - শান্ত নিরিবিলি জীবনটা কোনো এক সুদূর অতীতের মতো পিছু ফেলে আসা তরুণ প্রতিটি মুহূর্তে উপলব্ধি করে তার ভেতরে কিছু একটা মরে গিয়েছে। হয়তো বা স্বাভাবিক জীবনের বোধটা, হয়তো বা জগতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীটা। তরুণের শরীরে জায়গা করে নিয়েছে মুহুর্মুহু বীভৎসতা, নিষ্ঠুরতা দেখতে পাওয়া এক জরাজীর্ণ বৃদ্ধ-হৃদয়।
ট্রেনিং ক্যাম্পের অমানুষিক পরিশ্রমের দিন, সাধারণ এক ছাত্র থেকে একজন সৈনিক হয়ে ওঠা, চোখের সামনে সঙ্গী-সাথিদের করুণ পরিণতি কখনো বা মৃত্যু, অবর্ণনীয় কষ্টে কাটানো ফ্রন্টলাইনের সময়গুলো - সবমিলিয়ে এক পোড়খাওয়া সৈনিকের কঠিন দিনাতিপাতের রেকর্ড "অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট"।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া - এরিখ মারিয়া রেমার্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আঠারো বছর বয়েসে জার্মান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার মিলিটারি জীবনের দিনগুলোতে যুদ্ধের কারণে মানুষের দৈন্যদশা, কঠোর পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখছেন৷ যুদ্ধের সময়ে তিনি আহত হন। "অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট" একটি যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস। বইটি এর সিক্যুয়েলসহ বহুদিন পর্যন্ত নাৎসী জার্মানিতে নিষিদ্ধ ছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি যুদ্ধের ভয়ংকরতাকে রঙ চড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছেন, নিজের দেশের যোদ্ধাদের ছোট করেছেন এবং তার মাধ্যমে নিজের শান্তিপূর্ণ মনোভাবকে বড় করে দেখাতে চেয়েছেন।
কিন্তু সবকিছুর পরে এটি একটি কালজয়ী বিশ্বসমাদৃত উপন্যাস হিসেবে গণ্য হয়েছে। কিছু বই আছে প্রত্যেকের পড়া উচিত, তারমধ্যে এটি একটি। বইটা থেকে ১৯৩০ সালে একটি সিনেমাও হয়েছিল, যেটি একাডেমী এওয়ার্ডস উইনার।
খুব কাছ থেকে দেখা একজন মানুষের যুদ্ধের বিবরণগুলো পড়ে আপনার অন্তরাত্মা সামান্য হলেও কেঁপে যাবে। কেন এই অশান্তি? এই বইয়ের দর্শনগুলো অসাধারণ, এবং অসাধারণ। নিজেদের মধ্যে কোনো শত্রুতা না থাকবার পরেও উপরের কারো অঙ্গুলিনির্দেশে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে। "যুদ্ধ" নামক জিনিসটা না থাকলেই যারা কি না হতে পারতো একে অপরের বন্ধু।
জগত সভ্য হয়েছে, মানুষ সভ্য হয়েছে৷ কিন্তু নৃশংসতা কি কমেছে একবিন্দুও? বরং বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে বন্যতা-পশুত্ব তার ভেতরে রয়ে গিয়েছে ঠিক আগেরই মতো৷ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে এই কালিমা, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়াচ্ছে বিষ।
বইটা পড়ে মনটা খারাপ খারাপ লাগলো। কেমন একটা অবোধ্য বিষণ্ণতা ঘিরে ধরেছে চারপাশ থেকে পুরো বইটা পড়ার সময়ই। অনুবাদ এককথায় নিখুঁত। এতোটা ভালো অনুবাদ আমি বহুদিন পড়ি নি। অনুবাদের গুণে মনে আরো নাড়া দিয়ে গিয়েছে বইটা।
"... একভাবে বৃষ্টি পড়তে থাকে, লরি দুলতে দুলতে ছোটে, সাবধান বাণী আসে। বৃষ্টি পড়তেই থাকে। আমাদের মাথার ওপর বৃষ্টি পড়ে, ফ্রন্টে যারা মারা গেল তাদের ওপর বৃষ্টি পড়ে, বাচ্চা ছেলেটার থ্যাতলানো কোমর জুড়ে বৃষ্টি পড়ে, কেমারিখের কবরের ওপর বৃষ্টি পড়ে। পড়ছে তো পড়ছেই বৃষ্টি, থামাথামি নেই৷ আমাদের হৃদয় চুইয়ে নামে বৃষ্টির ধারা। বৃষ্টিতে তো প্রকৃতির সমস্ত ময়লা ধুয়েমুছে চলে যায়, হৃদয়ের ময়লা মুছে যায় না?"
যে হৃদয় এখনো বুঝে উঠার কথা ছিল না নিষ্ঠুরতার কি ধরণ, সে দেখে যাচ্ছে মৃত্যুর পর মৃত্যু, লাশের পাহাড়।
"... ঘণ্টা-মিনিট দিয়ে আমাদের দিন হয় না। আমাদের দিন হয় মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে, আহতদের মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে।"
তারচেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে সম্ভবত পড়তে হয় এই বিভীষিকা শেষ হয়ে যাবার পর৷ কতো লাশ, দুঃসহ স্মৃতি পিছে ফেলে যেতে হয়। যারা মরার তারা তো মরেই গেলো, কেউ বেঁচে থাকে জীবন্মৃত হয়ে, হৃদয়ে দগদগে ঘা নিয়ে, না পারে সামনে এগুতে, না পারে পিছিয়ে যেতে। আপাত শান্ত জীবনে দেহটার বাস হলেও চিরকালের জন্য মনটা আটকে গিয়ে ঘূর্ণিপাক খেতে থাকে ফেলে আসা রক্তাক্ত ময়দানে।
"... নির্মল বাতাস, বারুদের গন্ধ নেই, গোলার গর্জন নেই। চারদিকে এমন নিঃশব্দ যে একটা মাত্র লাইনে শেষ হয়েছে আর্মি রিপোর্ট : All Quiet On The Western Front.
"... যুদ্ধের প্রথম বোমাটা ঠিক হৃদয়ের মধ্যে পড়ে" - শান্ত নিরিবিলি জীবনটা কোনো এক সুদূর অতীতের মতো পিছু ফেলে আসা তরুণ প্রতিটি মুহূর্তে উপলব্ধি করে তার ভেতরে কিছু একটা মরে গিয়েছে। হয়তো বা স্বাভাবিক জীবনের বোধটা, হয়তো বা জগতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীটা। তরুণের শরীরে জায়গা করে নিয়েছে মুহুর্মুহু বীভৎসতা, নিষ্ঠুরতা দেখতে পাওয়া এক জরাজীর্ণ বৃদ্ধ-হৃদয়।
ট্রেনিং ক্যাম্পের অমানুষিক পরিশ্রমের দিন, সাধারণ এক ছাত্র থেকে একজন সৈনিক হয়ে ওঠা, চোখের সামনে সঙ্গী-সাথিদের করুণ পরিণতি কখনো বা মৃত্যু, অবর্ণনীয় কষ্টে কাটানো ফ্রন্টলাইনের সময়গুলো - সবমিলিয়ে এক পোড়খাওয়া সৈনিকের কঠিন দিনাতিপাতের রেকর্ড "অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট"।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া - এরিখ মারিয়া রেমার্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আঠারো বছর বয়েসে জার্মান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার মিলিটারি জীবনের দিনগুলোতে যুদ্ধের কারণে মানুষের দৈন্যদশা, কঠোর পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখছেন৷ যুদ্ধের সময়ে তিনি আহত হন। "অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট" একটি যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস। বইটি এর সিক্যুয়েলসহ বহুদিন পর্যন্ত নাৎসী জার্মানিতে নিষিদ্ধ ছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি যুদ্ধের ভয়ংকরতাকে রঙ চড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছেন, নিজের দেশের যোদ্ধাদের ছোট করেছেন এবং তার মাধ্যমে নিজের শান্তিপূর্ণ মনোভাবকে বড় করে দেখাতে চেয়েছেন।
কিন্তু সবকিছুর পরে এটি একটি কালজয়ী বিশ্বসমাদৃত উপন্যাস হিসেবে গণ্য হয়েছে। কিছু বই আছে প্রত্যেকের পড়া উচিত, তারমধ্যে এটি একটি। বইটা থেকে ১৯৩০ সালে একটি সিনেমাও হয়েছিল, যেটি একাডেমী এওয়ার্ডস উইনার।
খুব কাছ থেকে দেখা একজন মানুষের যুদ্ধের বিবরণগুলো পড়ে আপনার অন্তরাত্মা সামান্য হলেও কেঁপে যাবে। কেন এই অশান্তি? এই বইয়ের দর্শনগুলো অসাধারণ, এবং অসাধারণ। নিজেদের মধ্যে কোনো শত্রুতা না থাকবার পরেও উপরের কারো অঙ্গুলিনির্দেশে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে। "যুদ্ধ" নামক জিনিসটা না থাকলেই যারা কি না হতে পারতো একে অপরের বন্ধু।
জগত সভ্য হয়েছে, মানুষ সভ্য হয়েছে৷ কিন্তু নৃশংসতা কি কমেছে একবিন্দুও? বরং বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে বন্যতা-পশুত্ব তার ভেতরে রয়ে গিয়েছে ঠিক আগেরই মতো৷ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে এই কালিমা, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়াচ্ছে বিষ।
বইটা পড়ে মনটা খারাপ খারাপ লাগলো। কেমন একটা অবোধ্য বিষণ্ণতা ঘিরে ধরেছে চারপাশ থেকে পুরো বইটা পড়ার সময়ই। অনুবাদ এককথায় নিখুঁত। এতোটা ভালো অনুবাদ আমি বহুদিন পড়ি নি। অনুবাদের গুণে মনে আরো নাড়া দিয়ে গিয়েছে বইটা।
"... একভাবে বৃষ্টি পড়তে থাকে, লরি দুলতে দুলতে ছোটে, সাবধান বাণী আসে। বৃষ্টি পড়তেই থাকে। আমাদের মাথার ওপর বৃষ্টি পড়ে, ফ্রন্টে যারা মারা গেল তাদের ওপর বৃষ্টি পড়ে, বাচ্চা ছেলেটার থ্যাতলানো কোমর জুড়ে বৃষ্টি পড়ে, কেমারিখের কবরের ওপর বৃষ্টি পড়ে। পড়ছে তো পড়ছেই বৃষ্টি, থামাথামি নেই৷ আমাদের হৃদয় চুইয়ে নামে বৃষ্টির ধারা। বৃষ্টিতে তো প্রকৃতির সমস্ত ময়লা ধুয়েমুছে চলে যায়, হৃদয়ের ময়লা মুছে যায় না?"
যে হৃদয় এখনো বুঝে উঠার কথা ছিল না নিষ্ঠুরতার কি ধরণ, সে দেখে যাচ্ছে মৃত্যুর পর মৃত্যু, লাশের পাহাড়।
"... ঘণ্টা-মিনিট দিয়ে আমাদের দিন হয় না। আমাদের দিন হয় মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে, আহতদের মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে।"
তারচেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে সম্ভবত পড়তে হয় এই বিভীষিকা শেষ হয়ে যাবার পর৷ কতো লাশ, দুঃসহ স্মৃতি পিছে ফেলে যেতে হয়। যারা মরার তারা তো মরেই গেলো, কেউ বেঁচে থাকে জীবন্মৃত হয়ে, হৃদয়ে দগদগে ঘা নিয়ে, না পারে সামনে এগুতে, না পারে পিছিয়ে যেতে। আপাত শান্ত জীবনে দেহটার বাস হলেও চিরকালের জন্য মনটা আটকে গিয়ে ঘূর্ণিপাক খেতে থাকে ফেলে আসা রক্তাক্ত ময়দানে।
"... নির্মল বাতাস, বারুদের গন্ধ নেই, গোলার গর্জন নেই। চারদিকে এমন নিঃশব্দ যে একটা মাত্র লাইনে শেষ হয়েছে আর্মি রিপোর্ট : All Quiet On The Western Front.