You need to sign in or sign up before continuing.

A review by elhim
The Grass is Singing by Doris Lessing

4.0

ক্লাসিক বইগুলো শুরু করার আগে বেশ দ্বিধায় ভুগতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখানে কাহিনীর বৈচিত্রের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সমসাময়িক সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিংবা চরিত্রের মনস্তত্বের ওপর। রীতিমতো ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে হয়। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে, তবে সেরকম খুব কমই চোখে পড়েছে। যাই হোক, কষ্ট করে পড়ার পর একটু ভাবলেই বোঝা যায়, ঠিক কেন ক্লাসিক বইগুলো স্বতন্ত্রভাবে একেকটা রত্ন।
"The Grass is Singing" বইটা ২৬০ পৃষ্ঠার মতো। এরকম একটা বই পড়তে স্বাভাবিকভাবে দুদিনের বেশি লাগার কথা না। কিন্তু এটা পড়তে প্রায় পাঁচ দিন সময় নিতে হয়েছে। মাত্র দশটা অধ্যায় এখানে। একেকটা অধ্যায় এত বড় যে, একটা অধ্যায় শেষ করে পরের অধ্যায়ে যাওয়ার আগে ভাবতে হয়, শেষ করতে পারবো কিনা। কোনো অধ্যায়ের মাঝখানে ফেলে রাখতে ভালো লাগে না।

এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ডিক টার্নার ও মেরি টার্নার। খুব একটা সুন্দর শৈশব মেরির ভাগ্যে জোটেনি। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। ঝগড়া-বিবাদ ও দুঃখ-কষ্ট ছিস নিত্যসঙ্গী। পুরুষশাসিত সমাজের প্রতি তাই স্বভাবসূলভ এক নির্মোহ অভিব্যক্তি রয়েছে তার। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর প্রায় ত্রিশ বছর কাটিয়েছে নিজের মতো করে। কিন্তু এরপর সামাজিকতার চাপে পড়ে তাকে একজন স্বামী খুঁজে নিতে হয়। কিন্তু ডিকের খামারে এসে দেখে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। ডিক টার্নারের সাথে মেরির মতবিরোধ অনেক। দুজনের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই বিস্তর ফারাক। ডিক যেখানে স্বপ্নহীন, নির্ঝঞ্ঝাট ও সহানুভূতিসম্পন্ন একজন মানুষ, মেরি সেখানে লাগামছাড়া দিবাস্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা এক নারী। অবশ্য, এই দিবাস্বপ্নে ইন্ধন জোগায় পুনরায় শৈশবের মুখোমুখি হওয়াটা। ডিক যেখানে শহর দেখতে পারে না, সেখানে শহরকে ঘিরেই মেরির যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা।
চরম দারিদ্র, হতাশা ও গরমে পাগলপ্রায় অবস্থা হয় মেরির। নিজের অজান্তেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে কৃষ্ণাঙ্গ চাকর মোজেজের সাথে। নিঃস্ব হয়ে শেষপর্যন্ত নিজের প্রাণ হারানোর গল্পের শুরু এভাবেই।

এই বইটা পড়ে আমি ডরিস লেসিংয়ের লেখার প্রেমে পড়ে গেছি। চরিত্রের মনস্তত্ব নিয়ে এরকম অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লেখা খুব কমই পড়া হয়েছে। বইটা একইসাথে বেশ হালকা ধাঁচের ও মাথা ভারী করে দেওয়ার মতো। একটানা পড়ে শেষ করার তীব্র আকাঙক্ষা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না এর গাম্ভীর্যের ফলে। এত বড় একটা বইতে কথোপকথন একদম নেই বললেই চলে। ৩০-৪০ পৃষ্ঠা পর দেখা যায়, দুজনের মধ্যে স্রেফ একটা করে বাক্য বিনিময় হচ্ছে। একঘেঁয়ে লাগার কথা। কিন্তু লাগেনি। মেরির প্রতি একইসাথে রাগ, বিরক্তি, সহানুভূতি সবই কাজ করবে। ডিকের নির্মোহ ব্যক্তিত্ব আকর্ষণীয়, আবার হতাশাব্যঞ্জকও।
বইটা শুরু হয়েছে গোয়েন্দা গল্পের ধাঁচে, একটা খুনের আভাস দিয়ে। এরপর ক্রমাগত লেখিকা ভাঁজ খুলেছেন পুরো গল্পের। মৃত্যুরহস্যের আড়ালের গল্প বলতে গিয়ে তিনি অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে দেখিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক মৃত্যুর আগেই কীভাবে একজন মানুষ লাশ হয়ে যায়। মেরির মৃত্যু হয়েছে মূলত সেই শৈশবেই। বাকি জীবনটা নিছক এক অসহায়ত্বের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দৈহিক মৃত্যুর অপেক্ষা ছিল কেবল।

ভীষণ খালি খালি লাগছে.... :