tiash's reviews
412 reviews

হীরে বসানো সোনার ফুল by Samaresh Majumdar

Go to review page

4.0

তিতির আর রঞ্জনা, একজন বাড়ির মেয়ে আরেকজন বউ। দুজনের জীবনযাপন পদ্ধতি ভিন্ন, এমনকি ভিন্ন ধারায় চলে। আর আছে তিতিরে মা বাবা আর দাদা। তিতিরের বান্ধবীর সাথে দেখা হয় ট্রাম স্টেশনে। দুজনের বন্ধুত্ব পুরোনো। কিন্তু আজ হঠাৎ তাকে চমকাতেই হলো, লোকজন তাদের দিকে চেয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে। আরে বাবা তিতিরের বান্ধবী তখন রিতীমত পপুলার এক্ট্রেস। তারই সুবাদে অভিনয়ে কাজ পায় সে। কিন্তু ওদিকে ঘরে রায় বাঘিনী মা তার ওপর দাদা। তারা মানতে প্রস্তুত নয় যে সিনেমা লাইনটা আর আগের মতো নেই। প্রতিকুলতার শীর্ষে যখন সব দোদুল্যমান তখন, অন্ধকার আরো ঘনিয়ে এল বৌদি রঞ্জনার চাকরি করার জন্য। কিন্তু হায়, সেই সনাতন ধারার মা ছেলে। তাদের ভাবনার সুই সেই আদ্যিকালেই আটকে গেল।

বেশ প্রতিকূলতা কাটিয়ে দুজন নারী নেমে পড়ে কাজে। কিন্ত তা সহ্য হয় না দাদার। কিন্তু তিনি তা দমাতেও পাররছেনা । তাই হাতে তোলল মদের গ্লাস। তখন থেকে মাদকতার সাথে সাথে লুকায়িত জঘন্য মানসিকতা নজরে পড়ল। মা তখনো নির্বিকার। ওদিকে নব জাগরনের প্রতীকী চরিত্র বাবা নিরন্তরভাবে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠাবান দুই নারীকে। কিন্তু তার প্রতিপত্তি কম। এরকম বিরুপ অবস্থায় তাদের মাথা কি ঠান্ডা রাখা উচিত? কিই বা হলো তাদের! তবে কি ঘটে পরাজয়?

#বইটার_যা_ভালো_লাগা
বইটার গল্পের প্রবাহমাত্রা চরম দ্রুত, সাথে বেশ কিছু টুইস্ট ছিল। সামাজিক ঘরানার বইগুলাতে যেমন হয় আরকি কথার বলার ধরন দিয়ে পাঠ্যরস উপলব্ধি করাতে হয় লেখককে। এক্ষেত্র সমরেশের জুড়ি নেই..! এই বইটার চরিত্রের আধিক্য ছিল। যেটা বেশ উপভোগ্য। বর্তমানধারায় সমাজকে যে ভিন্ন চোখে দেখে সমরেশ, তারই প্রতিবিম্ব তার বইগুলো। প্রতিটাতেই থাকে চমক, থাকে নতুনত্ব। এরই ধারা এখানেও অক্ষুন্ন আছে। তবে কি দাদা চরিত্রটা নিতান্ত ব্যাক্তিত্বহীন, মাকাল ফলের মত অন্তঃসার শুন্য। ভালো লাগার প্রতিটি পরশ লাইনগুলো।

#যা_কিছু_ভাল_না_লাগা

ফ্রন্ট সাইজ বেশিই ছোট। শেষটা ভালো লাগেনি বরং তিতিরের ওপর রাগ হয়েছে। মায়ের চরিত্রটা ভালো লাগেনি। অনেকগুলা চরিত্রের মাঝে কয়েকটা চরিত্র গুবলেট হযে গেছে। বই এর একটা জায়গায় তিতিরের নামের জায়গাতে থিতির লেখা পেয়েছি। এই বিষয়টা ভাল করা যেত।

#বইটার_বাস্তবতা__
বইটার বাস্তব দিকটা বেশ প্রোজ্জ্বল। বর্তমান সমাজের মেয়েদের কাজ করার প্রতি সমাজ ও পরিবারের সীমাবদ্ধতা যেটা সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে প্রতীয়মান, সমরেশ তার বিরুদ্ধে লড়তে পছন্দ করেন। সাতকাহন, গর্ভধারিনী, মানুষের মা, জননী দেবী সহ আরো অনেক বইয়ে তিনি সেই ভাবধারা দেখি এই বইটাতেও। এছাড়া অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ততার জন্য সিনেমা লাইনটার আদি অবস্থা আর বর্তমান অবস্থাটাকে তিনি দেখাতে চেয়েছেন। তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, নারীদের ওপর অধিকার ফলানোর মত সংকীর্ণ মনোভাবের বিমুর্ত একটি গল্প এটি, বাস্তবতার রসে পুর্ণ।